প্রথম ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদনের ফলাফল গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা। তাহলে তনু কী করে মারা গেলেন—এ প্রশ্নের জবাবে কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ফলাফল জানিয়ে তনুর বাবা ইয়ার হোসেনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, তিনি গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কোনো কিছু পাওয়া না গেলে আমি কী বলব? আমি তো আর ডাক্তারের ওপরের কোনো ব্যক্তি না। আমার মেয়ের নাকে আঘাত, কানের নিচে আঘাত, মাথা থেঁতলানো—এগুলো কি সব মিছা?’
গত ২১ মার্চ তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের কনিষ্ঠ প্রভাষক। আদালতের নির্দেশে নয় দিন পর ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। আর এই বোর্ডের প্রধান হলেন কামদা প্রসাদ সাহা। এই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো প্রস্তুত হয়নি।
কামদা প্রসাদ সাহা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। তিনি বলেন, গত রোববার দুপুরের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথম ময়নাতদন্তের ভিসেরা প্রতিবেদন এসেছে। এরপর গতকাল প্রথম ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের সময়ে যেসব জিনিস পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, সেগুলোর প্রতিবেদন মিলিয়ে নতুন প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
কামদা প্রসাদ সাহা প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন গতকাল মামলাবর্তমান তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছেন।
অবশ্য প্রথম ময়নাতদন্ত নিয়ে শুরুতেই বিতর্ক উঠেছে। তাতে তনুর মাথার পেছনে জখমের কথা গোপন করার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া তাঁর কানের নিচে আঁচড়ের আঘাতকে মৃত্যুর পর পোকার কামড় বলে উল্লেখ করায়, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ময়নাতদন্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা। এ ক্ষেত্রে সেটাই বের করতে পারেনি। এ ছাড়া এই মামলার তদন্তের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো, ময়নাতদন্তের কতক্ষণ আগে তনুর মৃত্যু হয়েছে, সেটা জানা। প্রথম প্রতিবেদনে সেটাও আসেনি।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত ২৮ মার্চ পুলিশ কবর থেকে তনুর লাশ তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন করে। আদালতের নির্দেশে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে। কামদা প্রসাদ সাহাকে প্রধান করে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অপর দুই সদস্য হলেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রধান করুণা রানী কর্মকার ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক মো. ওমর ফারুক।
অবশ্য ৩০ মার্চ রাতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তনু যে হত্যার শিকার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে। তখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক আলামত থেকে তিনি এ ধারণা করছিলেন বলে জানান। একই কথা তিনি ওই দিন বিবিসিকেও বলেছিলেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পুনঃময়নাতদন্তে যকৃৎ ও পাকস্থলীর কিছু অংশ পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। আগে এক দফা ময়নাতদন্তে মরদেহের বিভিন্ন অংশ কাটাকাটি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার (গরম ও বৃষ্টি) মধ্যে নয় দিন পর কবর থেকে লাশ তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। এ অবস্থায় নির্যাতন ও ধর্ষণের আলামতের প্রমাণ পাওয়া কঠিন।
অপর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, প্রথম ময়নাতদন্তে অভিজ্ঞ কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। যার কারণে দরকারি কিছু বিষয় উপেক্ষিত থেকে গেছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী তনু গত ২০ মার্চ খুন হন। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশে একটি ঝোপ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন একমাত্র মেয়েকে হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।




No comments:
Post a Comment